মৌলভীবাজার প্রতিনিধি
মৌলভীবাজারের রাজনগরে পুর্ব শত্রুতার জেরে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে একটি সংঘবদ্ধ গ্রুপের সন্ত্রাসী হামলায় গুরুতর আহত পিতা-পুত্র ৮ দিন ধরে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়েরের ৫ দিন পেরিয়ে গেলেও পুলিশ কোন আসামী গ্রেফতার করতে না পারায় জনমনে অসন্তোষ বিরাজ করছে। এদিকে মামলাটি ধামাচাপা দিতে ঘটনার সাথে জড়িতরা থানায় একটি কাউন্টার মামলা করে জখমী ব্যক্তিদের আত্মীয়-স্বজনদের হয়রানী করার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এলাকাবাসী সুত্রে জানা যায়,উপজেলার ১ নং ফতেপুর ইউনিয়নের মুনিয়ারপাড় গ্রামের আলঘাটায় গত ১৪ আগষ্ট আহমদ আলী(৪২) ও ছাদিক মিয়া(৩৪) নামে দুইজন অটোরিক্সা চালকের মধ্যে গাড়ীতে প্যাসেঞ্জার তুলা নিয়ে কথাকাটাকাটি ও হাতাহাতি হয়। পরে অন্যান্য আটোরিক্সা চালক বিষয়টি মিমাংসা করে দেন। অটোরিক্সা চালক ছাদিক মিয়ার বাড়ি ঘটনাস্থলের পাশে থাকায় ছাদিক মিয়া এ খবরটি সাথে সাথে একটি “ওয়াটসআ্যপ গ্রুপে” জানিয়ে দেয়। এর ১০/১৫ মিনিট পরে হটাৎ ২০/২২ জনের একটি গ্রুপ দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে অটোরিক্সায় বসে থাকা আহমদ আলীর উপর হামলা করে রক্তাত্ব জখম করে। খবর পেয়ে আহত আহমদ আলীর ছেলে ইমরান মিয়া (১৭) তার পিতাকে উদ্ধারে ঘটনাস্থলে গেলে তার উপরও চলে সন্ত্রাসী হামলা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রত্যেক্ষদর্শী ৩ জন অটোরিক্সা চালক জানান, ছাদিক মিয়ার সাথে আসা সন্ত্রাসীদের হাতে রামদাসহ বিভিন্ন ধারালো অস্ত্র থাকায় তাদের চোখের সামনে পিতা-পুত্রকে মেরে রাস্তায় ফেলে রাখা হলেও প্রাণ ভয়ে তারা তাদের রক্ষায় এগিয়ে যাওয়ার সাহস করেনি। অস্ত্রধারীরা তাদেরকে বিভিন্ন হুমকি-ধামকি দিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করার পর তারা গুরুতর আহত আহমদ আলী ও তার পুত্র ইমরানকে উদ্ধার করে একটি গাড়ীতে তুলে প্রথমে মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা হাসপাতালে নিয়ে যায়। কর্তব্যরত ডাক্তার জখমী ব্যক্তিদের অবস্থা আশংকাজনক দেখে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন।
স্থানীয় সাংবাদিক ও শালিস ব্যক্তিত্ব আনন্দ টিভি’র জেলা প্রতিনিধি আব্দুল হাকিম রাজ জানান, তিনিসহ এলাকার কয়েকজন শালিস ব্যক্তিত্ব চেয়েছিলেন যেহেতু জখমী ব্যক্তিরা অত্যন্ত গরীব,তাই বিষয়টিকে স্থানীয়ভাবে একটি বিচারের পরিবেশ তৈরি করে আহত ব্যক্তিদের সু-চিকিৎসার ব্যবস্থা করার। কিন্তু জখমীদের পক্ষ থেকে শালিসদের কথায় বিচার মানলেও হামলাকারীরা জানায় তারা বিচার মানবেনা। পরে ঐদিন সন্ধ্যায় আহমদের পক্ষে লুলু মিয়া বাদী হয়ে রাজনগর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
গ্রামের শালিস ব্যক্তিত্ব জয়নাল আবেদীন, স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বার আব্দুস শহীদ চৌধুরী আমিন, সহ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জানান, হামলাকারীরা সকল একই গোষ্টির লোক, তারা আমাদের এলাকায় প্রভাববিস্তার সহ জনমনে আতংক সৃষ্টি করতে একটি “ওয়াটসআ্যপ” গ্রুপ করে তাদের গোষ্টির প্রবাসীদের কাছ থেকে প্রায় কোটি টাকার একটি ফান্ড তৈরি করেছেন বলে এলাকার মানুষের মুখে মুখে শোনা যাচ্ছে। এমনকি ঐ গ্রুপের কয়েকজনও এলাকায় প্রচার করছে তাদের ফান্ডের কথা। এই ফান্ড থেকেই তারা বিভিন্ন মানুষের উপর এভাবে হামলা করে মামলা-মোকদ্দমার খরচ মিটায়।
এদিকে জখমীদের পক্ষে থানায় দায়েরকৃত মামলার বাদী লুলু মিয়া জানান, তার দায়েরকৃত অভিযোগের তদন্ত করতে রাজনগর থানার এস,আই রবিউল গত ১৫ আগষ্ট সরেজমিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ঘটনার সত্যতা পান এবং জখমীদের ছবি নেন। এরপর ২/৩ দিন থানায় ধর্না দিলেও মামলা রেকর্ডে গড়িমসি করেন তিনি এবং এজাহার ভুক্ত একজন আসামীর নাম বাদ দিয়ে নতুন এজাহার দিতে চাপসৃষ্টি করেন।পরে ১৭ আগষ্ট রাতে তারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)বিনয় ভুষন রায়কে বিষয়টি অবগত করলে সাথে সাথে অভিযোগটি এফ,আই,আর করা হয়। খবর পেয়ে ঐদিন রাতেই অভিযুক্ত আসামী পালিয়ে বিদেশে চলে যায়।
লুলু মিয়া আরো জানান, তার অভিযোগ ১৭ আগষ্ট রেকর্ড করা হলেও পুলিশ কয়েকদফা বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে কোন আসামী গ্রেফতার করেতে পারেনি। এদিকে ১৯ আগষ্ট তার মামলাটি ধামাচাপা দিতে এবং তার চলাফেরা বন্ধ করতে আসামী পক্ষের গোষ্টির লোক, মামলাবাজ বলে খ্যাতি অর্জন করা আব্দুল কাদির পাখি, লুলু মিয়াকে প্রধান আসামী করে ৭ জনের নাম উল্যেখসহ একটি মামলা থানায় এফ,আই,আর করে তাদেরকে হয়রানী করার চেষ্টা করছে।
এলাকবাসী জানান, পাখি মিয়া একজন মামলাবাজ। আশ পাশের কয়েকটি গ্রামের মানুষ কয়েক বছর ধরে তার মিথ্যা মামলা-মোকদ্দমায় হয়রানীর শিকার। গত কয়েকদিন আগে তার বাড়ির মরহুম প্রাক্তন মেম্বার আরব আলীর ছেলেদের নামে থানায় পর পর তিনটি মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে তাদেরকে আর্থিক ক্ষতিসাধন করে। এর প্রতিবাদে ৩ গ্রামের মানুষ গত ২০ আগষ্ট রাতে মুনিয়ারপাড় গ্রামের জয়নাল মিয়ার বাড়িতে উঠান বৈঠক করে এর প্রতিবাদে বিভিন্ন স্থানে স্মারকলিপি প্রদানের সিদ্ধান্ত হয়।
এদিকে পাখি মিয়ার এসব মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে এলাকার মানুষজন মানবন্ধন করারও প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে একটি সুত্র জানায়।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস,আই হাসান জানান, ইতিমধ্যে পুলিশ আসামীদের গ্রেফতারে বিভিন্নস্থানে অভিযান চালিয়ে কোন আসামী গ্রেফতার করা সম্ভব না হলেও পুলিশী অভিযান অব্যাহত আছে।
রাজনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বিনয় ভুষন জানান, বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়ে আসামী গ্রেফতারে পুলিশ সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে।
Leave a Reply