নিজস্ব প্রতিবেদক
ফাইল ছবি
আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর দলটির নেতাকর্মীদের অনেকেই হামলার শিকার হয়েছেন। অনেকের বাসা-বাড়িতেও হামলার ঘটনা ঘটেছে। গণপিটুনিতে প্রাণ হারিয়েছেন আওয়ামী সমর্থিত কয়েকজন। এমন অবস্থায় চরম আতঙ্কে আছেন দলটির কেন্দ্রীয় নেতা থেকে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। পরিস্থিতি বুঝে নিজেদের রক্ষা করতে দেশের বিভিন্ন স্থানে ‘পর্যটক-বেশে’ গা ঢাকা দিয়ে আছেন আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকেই গা ঢাকা দিয়েছেন। যদিও এরই মধ্যে দলটির কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা গ্রেপ্তার হয়েছেন। তবে বেশিরভাগ নেতাই এখনও লাপাত্তা। তারা দেশে আছেন কিনা তাও জানা যায়নি।
অবশ্য গত ১০ আগস্ট রাজশাহী সেনানিবাসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ-জামান জানিয়েছেন, জীবন বিপন্ন হতে পারে এমন আশঙ্কা থেকে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিসহ অনেককে সেনা হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
সেনাপ্রধান বলেন, আমরা তাদের আশ্রয় দিয়েছি। তবে তাদের প্রতি যদি কোনো অভিযোগ থাকে, মামলা হয়, তাহলে তারা শাস্তির আওতায় যাবেন। কিন্তু অবশ্যই আমরা চাইব না যে বিচারবহির্ভূত কোনো কাজ বা হামলা হোক। তাদের জীবনের যে হুমকি আছে, সেটার জন্য আমরা তাদের আশ্রয় দিয়েছি। সে যে দলেরই হোক, যে মতেরই হোক, যে ধর্মের হোক, সেটা (নিরাপত্তা) আমরা দেখব।
তবে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের সহযোগী ও ভাতৃপ্রতীম বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা সেনা হেফাজতে নয়, বাইরেই আছেন। তারা নিজ নিজ জায়গা থেকে রয়েছেন আত্মগোপনে।
আওয়ামী লীগের একটি সহযোগী সংগঠনের একজন শীর্ষ নেতা ঢাকা মেইলের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ‘কারও খোঁজ-খবর খুব ভালো পাচ্ছি না। আমরা আসলে অন্যদের খোঁজ-খবর সেভাবে নিতে পারছি না। নিজেদের নিয়েই চিন্তায় আছি৷ এখন পর্যন্ত নিরাপদে আছি।’
একই অবস্থা তৃণমূলেও। আওয়ামী লীগের ভাতৃপ্রতীম সংগঠন ছাত্রলীগের একটি থানার সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে আলাপ হয় এই প্রতিবেদকের। তিনি বলেন, ‘আমরা দূরত্ব বজায় রাখছি৷ আপাতত নিরাপদে থাকার চেষ্টা করছি। আমার বিরুদ্ধে দুইটা মামলা হয়েছে বলে শুনেছি৷ স্বাভাবিকভাবেই আমাকে নিরাপদে থাকতে হবে।’
থানার নেতাদের পাশাপাশি ওয়ার্ড ও ইউনিটের নেতারাও এখন রয়েছেন আত্মগোপনে। ৫ আগস্ট এলাকা ছাড়ার পর আর কাউকেই নিজ নিজ এলাকায় দেখা যায়নি।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় করা বিভিন্ন মামলায় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা থেকে শুরু করে তৃণমূলের নেতাকর্মীদেরও আসামি করা হচ্ছে। এমনকি আওয়ামী লীগের পদে নেই, কিন্তু সংঘর্ষে জড়িত ছিলেন, তাদের বিরুদ্ধেও মামলা করা হচ্ছে।
সোমবার রাতে এমনই এক মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ২৯নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সলিমুল্লাহ সলু। এতে আরও নড়েচড়ে বসেছেন অন্যান্য ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও তৃণমূল নেতাকর্মীরা।
জানা গেছে, এরইমধ্যে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের বেশ কয়েকজন ওয়ার্ড কাউন্সিলর দেশ ছেড়েছেন। যারা দেশে রয়েছেন, তাদের কেউ কেউ ঢাকার অভিজাত এলাকায় অবস্থান করছেন।
আর তৃণমূল নেতাকরীরা ভ্রমণের নামে ঘুরে বেড়াচ্ছেন কক্সবাজার, কূয়াকাটা, সিলেটসহ বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান।
কারও খোঁজ-খবর খুব ভালো পাচ্ছি না। আমরা আসলে অন্যদের খোঁজ-খবর সেভাবে নিতে পারছি না। নিজেদের নিয়েই চিন্তায় আছি৷ এখন পর্যন্ত নিরাপদে আছি।
আওয়ামী লীগের একটি সহযোগী সংগঠনের একজন শীর্ষ নেতা
সূত্র জানিয়েছে, ৫ আগস্ট সরকার পতনের পরই নিজ নিজ এলাকা ত্যাগ করেছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এ সময় তাদের অনেকেই ছুটে যান কক্সবাজারে। জানা গেছে, দেশের সবচেয়ে বড় এই পর্যটন এলাকার এমন কোনো হোটেল নেই যেখানে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের অবস্থান নেই।
এছাড়া পর্যটক হিসেবে কুয়াকাটায় লুকিয়ে আছেন আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী। তৃণমূলের সঙ্গে আছেন বিভিন্ন মহানগর ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নেতারাও। নিজেদের নিরাপদ রাখতে নেতাকর্মীদের অনেকে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি এবং বান্দরবানেও পর্যটক-বেশে গা ঢাকা দিয়েছেন।
পর্যটক হিসেবে গা ঢাকা দিয়ে আছে এমন একটি দলের সঙ্গে আলাপ হয় এই প্রতিবেদকের। দলটি জানিয়েছে, ৫ আগস্ট বিকেলেই হামলার আতঙ্কে তারা নিজ নিজ এলাকা ছাড়েন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার আগ পর্যন্ত কেউ নিজ ঠিকানায় ফিরতে চাচ্ছেন না। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পর হওয়া মামলা নিয়ে এখন বাড়তি আতঙ্ক কাজ করছে তাদের মধ্যে।
Leave a Reply