নিজস্ব প্রতিবেদক
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, শেখ হাসিনা সরকারের ১৬ বছরের শাসনকালে হাজারো গুম ও জুলাই-আগস্টের গণআন্দোলনে গণহত্যার জন্য মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) মামলা করা হবে।
বুধবার (২৭ নভেম্বর) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আইসিসির চীফ প্রসিকিউটর করিম এ খান সাক্ষাৎ করতে এলে তিনি এ কথা বলেন।
সাক্ষাতকালে রোহিঙ্গা সংকট, মিয়ানমারের পরিস্থিতি, রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সহায়তা এবং জুলাই-আগস্টের গণআন্দোলনে সংঘটিত নৃশংসতার জন্য বিচার ও জবাবদিহিতা নিয়ে আলোচনা হয়।
আইসিসির চীফ প্রসিকিউটর প্রধান উপদেষ্টাকে জানান, তার অফিস মিয়ানমারের সামরিক সরকারের প্রধান মিন অং হ্লাইংয়ের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রেফতারি পরোয়ানা চেয়েছে।
করিম খান রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে একটি বিশেষ বৈশ্বিক সম্মেলন আয়োজনের জন্য প্রধান উপদেষ্টার আহ্বানকে সমর্থন করেন। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ ২০২৫ সালে সম্মেলনটি আয়োজনের সম্মতি দিয়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে এই সম্মেলন থেকে সংকটের টেকসই সমাধানের নতুন পথ খুঁজে পাওয়া যাবে। সম্মেলনের স্থান, তারিখ ও কার্যপদ্ধতি ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে নির্ধারণ করা হবে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এই সম্মেলন আন্তর্জাতিক সব অংশীদারকে একত্রে নিয়ে এসে সংকটের একটি স্থায়ী সমাধানের পথ বের করতে সাহায্য করবে, বিশেষ করে বাংলাদেশে শরণার্থী শিবিরে বসবাসরত রোহিঙ্গা এবং তাদের শিশুদের দুরবস্থার বিষয়ে।
অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস আরও বলেন, আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যে এই সংকট বিস্ফোরিত না হয়। শিবিরে বেড়ে ওঠা হতাশাগ্রস্ত যুবকদের প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি বলেন, সম্প্রতি বাংলাদেশে আরও কয়েক হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থীর ঢল এবং মিয়ানমারের সর্বশেষ পরিস্থিতি বাংলাদেশে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
প্রধান উপদেষ্টা রাখাইন রাজ্যে একটি নিরাপদ এলাকা প্রতিষ্ঠার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন, যা বাস্তুচ্যুত মানুষদের সহায়তা ও চলমান মানবিক সংকট মোকাবিলায় সহায়ক হবে।
তিনি আরও বলেন, এই এলাকার নিরাপত্তা জাতিসংঘ নিশ্চিত করবে। যুদ্ধ থেমে গেলে এই এলাকায় বসবাসকারী লোকজন সহজেই তাদের নিজ নিজ স্থানে ফিরে যেতে পারবে।
প্রধান উপদেষ্টা জানান, শেখ হাসিনা সরকারের ১৬ বছরের শাসনকালে হাজারো গুম ও জুলাই-আগস্টের গণ-আন্দোলনে গণহত্যার জন্য মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে আইসিসিতে মামলা করা হবে।
আইসিসি প্রসিকিউটর বলেন, তারা বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সঙ্গে সহযোগিতা বাড়াতে ইচ্ছুক। এই ট্রাইব্যুনাল এরই মধ্যে শেখ হাসিনা এবং তার রাজনৈতিক দলের সদস্যদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে।
রোহিঙ্গা বিষয়ক উচ্চ প্রতিনিধি খলিলুর রহমান, এসডিজি বিষয়ক প্রধান সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব রিয়াজ হামিদুল্লাহ এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে রোহিঙ্গা বিষয়ক উচ্চ প্রতিনিধি খলিলুর রহমান প্রসিকিউটর করিম খান এবং তার আইসিসি টিমের সদস্যদের জন্য এক মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করেন।
খলিলুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ আইসিসি প্রতিষ্ঠার রোম স্ট্যাটিউটে সই করা প্রথম এশীয় দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম এবং আমরা আগামী দিনে আমাদের সহযোগিতা আরও গভীর করার প্রত্যাশা করছি।
Leave a Reply