ধর্ম ডেস্ক:
আজ ৩১ ডিসেম্বর। রাত ১২টা বাজলেই থার্টিফার্স্ট নাইট উদযাপন শুরু হবে। এ রাত কারো জন্য আনন্দের হলেও শিশু-বৃদ্ধ-অসুস্থ ও পশু-পাখিদের জন্য মোটেও শুভকর নয়। গেলো কয়েক বছরে এর প্রমাণ স্বচক্ষে দেখেছে বাংলাদেশ। আজ অনেক পরিবার দুঃখজনক স্মৃতিতে কাতর হবে নিশ্চয়ই।
গত বছর ৩১ ডিসেম্বর রাতে আতশবাজির শব্দে মোহাম্মদপুরের তানজিম উমায়ের চটফট করতে করতে মারা গিয়েছিল। হৃদরোগে ভুগতে থাকা বাচ্চাটি টানা বাজির শব্দ সইতে পারেনি। সারারাত সে ছটফট করছিল। পরদিন সকালে উমায়েরকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। একপর্যায়ে তার শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে এলে চিকিৎসকরা দ্রুত আইসিইউতে নিয়ে যান। সেখানেই কিছুক্ষণ পর সে মারা যায়।
কিশোর সিয়ামের কথাও সবার মনে পড়ার কথা। নতুন বছর উপলক্ষ্যে বাসার ছাদে ফানুস উড়াতে কেরোসিন ঢালতে গিয়ে সিয়ামের শরীরে আগুন ধরে যায়। পরে আগুন নেভাতে গিয়ে গেলে আরও দুই জন দগ্ধ হন। পরদিন চিকিৎসাধীন অবস্থায় সিয়ামের মৃত্যু হয়।
সিয়ামের মতোই থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপন করতে গিয়ে মৃত্যু হয় মিরাজ হোসেনের। জানা যায়, থার্টি ফার্স্ট নাইটের আয়োজন করতে ওইদিন রাত পৌনে ৮টার দিকে নিজ বাড়ির পাশে সাউন্ড বক্সে বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয় মিরাজ। পরে তাকে আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
শুধু উমায়ের, সিয়াম বা মিরাজ নয়। থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপনকে কেন্দ্র করে সারাদেশে বহু হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া পটকা ও আতশবাঁজির শব্দে অনেকেই অসুস্থ বোধ করেন।
এসব কারণেই থার্টি ফার্স্ট নাইটে পটকা ও আতশবাজি ফোটানো থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০০৬-এর ৭ বিধি লঙ্ঘন করে অননুমোদিতভাবে থার্টি ফার্স্ট নাইট উদ্যাপনের সময় আতশবাজি ও পটকা ফোটালে তা বিধিমালার ১৮ বিধি অনুযায়ী দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে গণ্য।
আজ মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) থার্টি ফার্স্ট নাইটে দুর্ঘটনারোধে বাসাবাড়ির ছাদ ও বাসভবন, উন্মুক্ত স্থান কিংবা পার্কে আতশবাজি, পটকা ফোটানো বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ (আইজিপি) আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্টদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
ইসলামেও নতুনবর্ষ উদযাপনে পটকা ফোটানো, হৈ-হুল্লোড় ইত্যাদি নিষিদ্ধ। ইসলামের দৃষ্টিতে এটি অমুসলিমদের সংস্কৃতি। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো সম্প্রদায়ের সাদৃশ্য অবলম্বন করবে, সে ব্যক্তি (কেয়ামতের দিন) তাদের অন্তর্ভুক্ত হবে।’ (আবুদাউদ, মেশকাত: ৪৩৪৭)
নতুন বছরে এলে একজন মুমিনের উচিত- ফেলে আসা দিনগুলোর ভালো-মন্দ হিসাব করা এবং আগামীর জন্য পরিকল্পনা করা। কারণ পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে ঈমানদাররা, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং প্রত্যেকের উচিত আগামীর জন্য সে কী করেছে তা খতিয়ে দেখা..।’ (সুরা হাশর: ১৮)
রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘বুদ্ধিমান ওই ব্যক্তি, যে নিজের পর্যালোচনা করে এবং মৃত্যু-পরবর্তী জীবনের জন্য প্রস্তুতি নেয়। আর নির্বোধ ও অক্ষম সেই ব্যক্তি, যে মনোবৃত্তির অনুসরণ করে এবং অলীক কল্পনায় ডুবে থাকে।’ (তিরমিজি: ২৪৫৯)
ভালো কাজের জন্যও বিকট শব্দ ইসলামে পছন্দ করে না। ওমর (রা.)-এর যুগে জনৈক ব্যক্তি মসজিদে নববিতে এসে প্রতিদিন বিকট আওয়াজে ওয়াজ শুরু করতেন। এতে হুজরায় অবস্থানরত হজরত আয়েশা (রা.)-এর কাজে ব্যাঘাত হত। তাই তিনি ওমর (রা.)-কে বিষয়টি অবহিত করলে তিনি ওই লোককে নিষেধ করে দেন। লোকটি কিছুদিন পর আবার ওয়াজ শুরু করলে তিনি তাকে শাস্তি দেন। (আখবারু মদিনা, ওমর ইবনে শাব্বাহ: ১/১৫)
সুতরাং উৎসবের নামে যেকোনো অনর্থক কাজ থেকে বিরত থাকা ইসলামে শিক্ষা। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘ব্যক্তির ইসলামের সৌন্দর্য হলো অনর্থক বিষয় ত্যাগ করা।’ (তিরমিজি: ২৩১৮)
নতুন বছরে অনর্থক কাজকর্ম থেকে মুসলমানদের বিরত থাকতে হবে। আগামীর দিনগুলো যেন সুন্দর ও কল্যাণকর হয় সেজন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করতে হবে। হাদিসে এ সংক্রান্ত বিভিন্ন দোয়া রয়েছে। ইসলামে নতুন বছরের মুসলমানদের জন্য আরও অনেক করণীয় রয়েছে। তন্মধ্যে মানুষের জন্য ত্যাগ স্বীকার এবং পুরনো বছরের আত্মপর্যালোচনা করা, তাওবা-ইস্তেগফার করা, নতুন বছরের কর্মপরিকল্পনা সাজানো অন্যতম। এছাড়ও মুমিন ঈমান ও আমলের সমৃদ্ধির জন্য কর্মতৎপর হয়ে ওঠবে। পাশাপাশি কোরআন-হাদিস চর্চা ও সিরাত-সাহিত্য অধ্যয়ন, আল্লাহর রাস্তায় অংশগ্রহণ বাড়ানো ইত্যাদি হাতে নেবে।
Leave a Reply