নিজস্ব প্রতিবেদক:
দুই দফায় নিয়োগ দেওয়া ৫৯ জন জেলা প্রশাসকের (ডিসি) মধ্যে আটজনের নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোখলেস উর রহমান।
বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ের নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে সিনিয়র সচিব এ কথা জানান। বঞ্চিত কর্মকর্তাদের দাবির মুখে সরকার এ সিদ্ধান্ত নিলো।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বলেন, সাংবাদিকদের বিভিন্ন গঠনমূলক প্রতিবেদন এবং বিভিন্ন অভিযোগের ভিত্তিতে অনেক দিনের পুরোনো তথ্যের ভিত্তিতেও যেসব পদায়নকৃত জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে ভ্যালিড অভিযোগ পাওয়া গেছে, সেগুলো আমরা বিবেচনায় নিয়েছি। আপনারা জানেন, স্ট্যান্ডিং বাছাই কমিটির মাধ্যমে ডিসি ফিট লিস্ট হয়। যেটার প্রধান থাকেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। সেই কমিটি আজ বসেছিল। তারা পর্যালোচনা করে ইমিডিয়েট যেটা হয়েছে, এরই মধ্যে আটজন ডিসির নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে। গত দুদিনে আমরা দুটি তালিকায় ৫৯ জনকে ডিসি নিয়োগ দিয়েছি।
লক্ষ্মীপুর, জয়পুরহাট, কুষ্টিয়া, রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ, শরীয়তপুর, দিনাজপুর ও রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসকের নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিনিয়র সচিব।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের উপসচিব সুফিয়া আক্তার রুমী লক্ষ্মীপুর, বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটি ২-এর সহায়ক অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক (উপসচিব) মো. সাইদুজ্জামান জয়পুরহাট, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ফারহানা ইসলাম কুষ্টিয়া, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. মাহবুবুর রহমান রাজশাহী, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মনির হোসেন হাওলাদার সিরাজগঞ্জ, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের উপসচিব আব্দুল আজিজ শরীয়তপুর, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোবাশশেরুল ইসলাম দিনাজপুর, আরপিএটিসির উপ-পরিচালক মনোয়ারা বেগম রাজবাড়ীর ডিসি পদে নিয়োগ পেয়েছিলেন। তাদের নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে।
এছাড়া চার জেলায় রদবদল করা হয়েছে। টাঙ্গাইলের ডিসি হিসেবে যাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল তাকে পঞ্চগড়ে বদলি হয়েছে। এছাড়া নীলফামারীর ডিসিকে টাঙ্গাইল, নাটোরের ডিসিকে লক্ষ্মীপুরে বদলি করা হয়েছে। পঞ্চগড়ের ডিসিকে নীলফামারীর ডিসি করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন মোখলেস উর রহমান।
এক্ষেত্রে টাঙ্গাইলের ডিসি সাবেত আলীকে পঞ্চগড়ে, নীলফামারীর ডিসি শরিফা হককে টাঙ্গাইলে, নাটোরের ডিসি রাজীব কুমার সরকারকে লক্ষ্মীপুরে এবং পঞ্চগড়ের ডিসি নায়িরুজ্জামানকে নীলফামারীতে বদলি করা হয়েছে।
সচিব আরও বলেন, ‘আমাদের যে কোনো জায়গায় যদি আরও সমস্যা থাকে যেটা ভ্যালিড, ক্লাসিফাইড এবং আনবায়াসড, এটা চলমান প্রক্রিয়া। আপনারা ইতিহাসে দেখেছেন না, একদিনের ডিসি, একদিনের কমিশনার একদিনের সচিব।’
তিনি বলেন, ‘আমরা সচেতনতার সঙ্গে কাজ করি। কোথাও যদি ফাঁক-ফোকর থাকে, তবে সেটা আপনারা (সাংবাদিক) ধরিয়ে দেবেন।’
যে আট জেলায় নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে সেখানে তিনদিনের মধ্যে নতুন ডিসি নিয়োগ দেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
গত সোম ও মঙ্গলবার দুই দফায় ৫৯ জেলায় নতুন জেলা প্রশাসক (ডিসি) নিয়োগ দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এ নিয়োগ নিয়ে কর্মকর্তাদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়। তারা ডিসি নিয়োগের প্রজ্ঞাপন বাতিল চেয়ে মঙ্গলবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের গিয়ে হট্টগোল করেন। শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেনের কাছে তাদের দাবি তুলে ধরে
‘বঞ্চিত’ কর্মকর্তারা দাবি করেন, যাদের ডিসি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তাদের প্রায় সবাই আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী। গত সরকারের অনুগত থাকায় তারা ভালো জায়গায় চাকরি করেছেন। একই সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে সহকর্মীকে হেনস্তা, আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা, সাবেক মন্ত্রীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার অভিযোগ তুলেছেন বঞ্চিতরা।
Leave a Reply