জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সংশোধিত আইনে তিন বাহিনীর সঙ্গে পুলিশ ও র্যাবেরও বিচার করা যাবে বলে মন্তব্য জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামীম।
সোমবার (২৫ নভেম্বর) দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন মন্তব্য করেন তিনি।
এমএইচ তামীম বলেন, এই আইনে একইসঙ্গে বিদেশে অপরাধ করলেও ট্রাইব্যুনালে বিচার করা যাবে। শুধু কোনো রাজনৈতিক দলের বিচার করা যাবে না।
রোববার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধন করে অধ্যাদেশ জারি করেন রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন। গতকাল এই অধ্যাদেশের গেজেট বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।
এতে বলা হয়, সংসদ না থাকায় এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার পরিস্থিতি বিরাজ করার বিষয়টি রাষ্ট্রপতির কাছে ‘সন্তাষজনকভাবে প্রতীয়মান’ হওয়ায় এ অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে।
এর আগে গত ২০ নভেম্বর প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে সচিবালয়ে মন্ত্রিসভা কক্ষে উপদেষ্টা পরিষদের সভায় ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধন করে খসড়া অনুমোদন এবং অধ্যাদেশ জারির সিদ্ধান্ত হয়।
বিদেশে বসে কেউ মানবতাবিরোধী অপরাধ করলেও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তা আমলে নেওয়ার সুযোগ রেখে অধ্যাদেশ জারির এ উদ্যোগ নেয় অন্তর্বর্তী সরকার।
ওইদিন সভা শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আব্দুর রশীদ সচিবালয়ে এক ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘ট্রাইব্যুনাল চাইলে শুনানির অডিও ও ভিডিও রেকর্ড রাখতে পারবে। তবে গণমাধ্যমের জন্য সম্প্রচারের কোনো ব্যবস্থা থাকবে না।’
আগে খসড়ায় অপরাধ প্রমাণ হলে দল ও সংগঠনের ১০ বছর নিষিদ্ধের প্রস্তাব করা হয়। উপদেষ্টা পরিষদের সভায় এটি বাদ রেখে সংশোধনী অনুমোদন করা হয়। উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদনের পর রাষ্ট্রপতি সই করলে রোববার এটি অধ্যাদেশ আকারে জারি করা হয়।
ট্রাইব্যুনালের সংশোধিত আইনে আরও যেসব পরিবর্তন আনা হয়েছে সেগুলো হলো
(১) সেকশন ১ এ আগে এখতিয়ার ছিল শুধু বাংলাদেশে। এখন এখতিয়ার বাংলাদেশ সহ বাংলাদেশের বাইরেও।
(২) সেকশন ২ এর ক্লজ aa এর পরিবর্তে নতুনরূপে ডিসিপ্লিনড ফোর্স বলতে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী, পুলিশ র্যাব, বিজিবি, কোস্ট গার্ড আনসার বা আইনের দ্বারা সৃষ্ট অন্য কোন ফোর্সকে বুঝাবে।
(৩) সেকশন ৩ (২) এর ক্লজ এ তে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ বলতে নতুন কিছু যোগ হয়েছে যেমন forcible transfer of population, sexual exploitation, enforced disappearance, human trafficking, sexual slavery, enforced prostitution, forced pregnancy, enforced sterilisation।
গণহত্যার অর্থ থেকে পলিটিকাল গ্রুপ বাদ গেছে। উক্ত সেকশনের ২ এর ( g ) তে incitement শব্দটি যুক্ত হয়েছে
(৪) সেকশন ৪ এ liability of crimes বিস্তৃত ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
(৫) নতুন সেকশন ৯ এ যুক্ত করা হয়েছে। ট্রাইব্যুনাল ইচ্ছা করলে অডিও ভিজুয়াল শুনানির ব্যবস্থা করতে পারেন।
(৬) নতুন সেকশন ১০বি যুক্ত হয়েছে। সেখানে বিদেশি পর্যবেক্ষকদের থাকার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
(৭) সেকশন ১১ এর নতুন subsction ৭ ও ৮ সৃষ্টি করা হয়েছে। এখানে বলা হয়েছে unavoidable circumstances এর জন্য ট্রাইব্যুনাল সন্তুষ্ট হলে ক্ষতিগ্রস্ত এবং সাক্ষীদের ভার্চুয়াল হেয়ারিং নিতে পারবেন।
(৮) সেকশন ১৯ (১) এর পরিবর্তে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করা হয়েছে। সেখানে অডিও ভিডিও ডিভিডি সিসিটিভি হার্ডওয়ার সফটওয়্যার অথবা অন্য কোন ডিজিটাল ডিভাইস সম্পর্কে বলা হয়েছে যেগুলো ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করা যাবে।
(৯) সেকশন ২১: অন্তর্বর্তী আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারবে শুধু ট্রাইব্যুনাল অবমাননার শাস্তির বিরুদ্ধে। আপিল বিভাগে আবেদন পেন্ডিং থাকলে ট্রাইব্যুনাল মামলা চালিয়ে যাবেন সে কথাও বলা হয়েছে।
Leave a Reply